Home » মহাভারত » [মহাভারতের কাহিনী বাংলায়] মহাভারতের অর্জুন ও কর্ণর শত্রুতা কী পূর্বজন্মের ছিল?

[মহাভারতের কাহিনী বাংলায়] মহাভারতের অর্জুন ও কর্ণর শত্রুতা কী পূর্বজন্মের ছিল?

মহাভারত কালে দুজন মহান ধনুক যোদ্ধা ছিলেন – অর্জুন ও কর্ণ। কিন্তুতাঁরা একে অপরের শত্রু ছিল। সব সময় তাঁরা একে অপরকে পরাজয় করার সুযোগ খুঁজত। তাঁদের এই শত্রুতা সম্পর্ক নতুন ছিল না। তাদের শত্রুতা ছিল পূর্ব জন্মের।

অর্জুন ও কর্ণর শত্রুতার কারণ

বিষ্ণুদেব ও ব্রম্ভদেবর মধ্যে আলোচনা

এই সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে পদ্মপুরাণ এর সেই ঘটনা যখন দেবলোকে ব্রহ্মাণ্ডের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভগবান বিষ্ণু ও ব্রহমার মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল।

মহাভারতের অর্জুন ও কর্ণর শত্রুতার কারণ

ভগবান বিষ্ণু ব্রহ্মদেব কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “সৃষ্টির পালনকর্তা হওয়ার জন্য আমি খুব আনন্দিত যে আমি একটি মহান কার্য করছি। সৃষ্টির পালন না করলে তা ধ্বংস হয়ে যাবে।”

কিন্তু ব্রহ্মদেব ভগবান বিষ্ণুর কথা ভুল ভাবে নেন।

তিনি বলেন, “সৃষ্টি পালন করার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো আমার। আমি সমস্ত জীবের জন্ম দিই। ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত বস্তু আমি নির্মাণ করি।”

ব্যাস আর কোথায় যায়। এক কথা দুই কথা হতে হতে একসময় ঝগড়ায় পরিনত হয়।

শেষ পর্যন্ত এই ঝগড়ার মীমাংসা করার জন্য ভগবান বিষ্ণু মহাদেব শিব কে ডাকেন।

মহাদেব বিষ্ণুদেবের ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ব্রম্ভদেবকেকে তার অহংকার এর কারণ জিজ্ঞেস করেন।

ব্রম্ভদেব বলেন, “অহংকার নয়। আমি যা বলছি তাই সত্য। সর্বপ্রথম আমি। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সর্বপ্রথম আমি উৎপন্ন হয়েছি। তারপর আমি অন্য সবাইকে সৃষ্টি করেছি।”

ব্রম্ভদেবের কথা শোনামাত্র মহাদেব প্রচন্ড ক্রোধিত হয়ে তার রুদ্র রূপ ধারণ করেন।

তিনি ব্রম্ভদেব কে বলেন, “আপনি আপনার দায়িত্ব কে অহংকার দিয়ে পূর্ণ করেছেন। এই অপরাধের শাস্তি আপনি অবশ্যই পাবেন।

এই কথা বলার পর মুহূর্তেই মহাদেব ব্রম্ভদেবের পঞ্চম মাথা কেটে তার শরীর থেকে আলাদা করে দেন। তারপর তিনি সেখান থেকে চলে যায়।

ব্রম্ভদেব তার কাটা মাথা দেখে প্রচন্ড রেগে যান।

আরও পড়ুন:

শ্বেতজ এর জন্ম

তিনি তাঁর মাথার ঘাম নিচে ফেলে বলেন, “আমার ক্রোধের ঘাম থেকে এক অসুর সৃষ্টি হোক।”

তৎক্ষণাৎ ব্রহ্মদেবের ঘাম থেকে এক ভয়ানক অসুর উৎপন্ন হয় যার নাম দেওয়া হয় ‘শ্বেতজ’। সেই অসুরের শরীরে ছিল এক হাজার কবচ। এজন্য তাকে ‘সহস্র’ কবচ ও বলা হয়।

ব্রহ্মদেব শ্বেতজ কে আদেশ দেয়, “তুমি এখনই কৈলাস পর্বত যাও এবং মহাদেবের কাছে আমার অপমানের বদলা নাও।”

ব্রহ্মদেবের আদেশ পেয়ে শ্বেতজ কৈলাস পর্বতে এসে উপস্থিত হয়।

মহাদেব শিব ভালভাবেই জানতেন যে ব্রম্ভদেবের ঘাম থেকে উৎপন্ন অসুর কে মারা খুবই কঠিন হবে।

তিনি তৎক্ষণাৎ বিষ্ণুদেবের কাছে গিয়ে তাকে বলেন, “কেবল আপনি সে অসুরের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতে পারেন।”

মহাদেব ও বিষ্ণুর এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই শ্বেতজ সেখানে উপস্থিত হয়।

ভগবান বিষ্ণু শ্বেতজ কে যুদ্ধের জন্য আহ্বান করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন শ্বেতজ কে পরাজিত করা অসম্ভব।

Also Read: ২৭০ টি মোটিভেশনাল উক্তি

রক্তজ এর জন্ম

তিনি মহাদেবকে বলেন,  “আমি আমার ডান হাত আপনাকে দিচ্ছি।”

কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পর মহাদেব ভগবান বিষ্ণুর ডানহাতে ত্রিশূল ঢুকিয়ে দেয় যার ফলে রক্তপ্রবাহ শুরু হয়।

এরপর মহাদেব তার তৃতীয় নেত্র দিয়ে প্রবাহিত রক্তকে কিছুক্ষণ দেখেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই রক্তের উপর বজ্রপাত হয় ও তার থেকে উৎপন্ন হয় সহস্র হাত ওয়ালা এক বিশাল আকারের প্রাণী যার নাম দেওয়া হয় ‘রক্তজ’।

মহাদেব শিব রক্তজ কে আদেশ করে শ্বেতজ এর সাথে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করার জন্য।

শুরু হয় শ্বেতজ ও রক্তজ এর মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ।

তারা একে অপরকে পরাজিত করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু অসফল হয়।

তাদের যুদ্ধ অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে।

শেষে শ্বেতজ রক্তজের ৯৯৮ টি হাত কেটে দেয় এবং রক্তজ শ্বেতজের ৯৯৯ টি কবচ ভেঙে দেয়। যার ফলে রক্তজের ২ টি হাত ও শ্বেতজের ১ টি কবচ অবশিষ্ট থাকে।

যুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে শ্বেতজ যেই মাত্র রক্তজ কে মারতে যাবে।

আরও পড়ুন: শুভ অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৩ ছবি ও শুভেচ্ছা বার্তা

তখনি ভগবান বিষ্ণু কে বললেন, “হে ব্রম্ভদেব, দুই যোদ্ধার যুদ্ধের ফলে সবকিছু ধ্বংস হওয়ার মুখে।

তিনি আবার বলেন, “এই যুদ্ধ এখনই থামিয়ে দেওয়া উচিত। তা না হলে সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে।”

তারপর তিনি ব্রম্ভদেবকে প্রসন্ন করার জন্য বলেন, “এটা নিশ্চিত যে শ্বেতজ যে কোনো সময় রক্তজকে হত্যা করতে পারে।”

বিষ্ণুদেবের কথা শুনে ব্রহ্মদেব খুব প্রসন্ন হয়। তিনি বলেন, “যুদ্ধের পরিণাম শ্বেতজ ও রক্তজের পরের জন্মে ঠিক হবে।”

বিষ্ণুদেব ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন। কারণ এতক্ষণ যা হচ্ছিল তা বিষ্ণুদেবের ই পরিকল্পনা ছিল

তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রহ্মদেব কে বলেন, “আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন ব্রহ্মদেব এবং তাদের যুদ্ধের পরিণাম পরের জন্মের জন্য ছেড়ে দেওয়া যাক।”

এরপর ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর হঠাৎ ত্রিদেব একসাথে যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা করেন

ত্রিদেব শ্বেতজ ও রক্তজ কে বলেন, “তোমরা তোমাদের এই যুদ্ধ পরের জন্মে করবে এবং তখনই আমরা যুদ্ধের বিজয়ী ঘোষণা করব।”

Also Read:

শ্বেতজ ও রক্তজ এর কর্ণ ও অর্জুন রুপে পুনর্জন্ম

শ্বেতজ এর জন্মের দায়িত্ব দেওয়া হয় সূর্যদেব কে এবং রক্তজ এর জন্মের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইন্দ্রদেব কে। কিন্তু ইন্দ্রদেব রক্তজের জন্ম দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন ।

তিনি ভগবান বিষ্ণু কে বলেন, “আপনি এর আগে রাম অবতারে আমার মানসপুত্র বালী কে বধ করেছেন। কিন্তু এবার রক্তজ মারা গেলে আমি তার জন্ম দায়িত্ব নেব না।”

ইন্দ্র দেবের কথা শুনে ভগবান বিষ্ণুর তাকে কথা দেয় যে এইবার তার মানসপুত্র রক্তজ শ্বেতজকে অবশ্যই হত্যা করবে।

মহাভারতে কর্ণ অর্জুন যুদ্ধ

ভবিষ্যতে শ্বেতজ সূর্যপুত্র কর্ণ রুপে জন্ম গ্রহণ করে এবং রক্তজ ইন্দ্রপুত্র অর্জন রুপে জন্মগ্রহণ করে।

তাদের পূর্ব জন্মের যুদ্ধের ফলাফল মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সম্পন্ন হয় যেখানে অর্জুন রুপে রক্তজ কর্ণ রুপী  শ্বেতজ কে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করে।

পাঠকগণ আপনারা এতক্ষণ শ্বেতজ ও রক্তজ অথাৎ কর্ণ ও অর্জুন এর পূর্ব জন্মের শত্রুতার যে কথা পড়লেন তা পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে।


এই রকম আরও অজানা তথ্য জানার জন্য আপনি উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর লেখা ‘মহাভারত’ পড়তে পারেন। নীচে অনলাইনে এই বইটি কেনার Amazon link দেওয়া হল:

Price: ₹80.00 INR


আরও পড়ুন:

Affiliate Disclosure: Please note that some of the links above are affiliate links and add No additional cost to you. If you purchase any product using these links we will get a small commission as compensation without costing you anything extra. You can consider this as a reward for our hard work to create awesome content and maintain this website free for you.

2 thoughts on “[মহাভারতের কাহিনী বাংলায়] মহাভারতের অর্জুন ও কর্ণর শত্রুতা কী পূর্বজন্মের ছিল?”

    • মহাভারতের কর্ণ এবং অর্জুনের শত্রুতা পূর্ব জন্মের এই বিষয়ে পদ্মপূরানে সবিস্তারে বর্ণনা করা আছে।

      বিষয়টির সত্যতা যাচাই করার জন্য আপনি পদ্মপূরাণ পড়ে দেখতে পারেন।

      Reply

Leave a Comment