Home » Biography » বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali

বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali

ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali: ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিধান চন্দ্র রায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের অনেক উন্নয়ন করেছেন। এজন্য তাকে ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করেন – দুর্গাপুর, কল্যাণী, বিধাননগর, অশোকনগর এবং হাবড়া।

তিনি সেই বিরল মানুষদের একজন যারা M.R.C.P. ও F.R.C.S. করেছেন একসাথে মাত্র ২ বছর ৩ মাসে। তার জন্ম ও মৃত্যুদিন ১ জুলাই ভারতে ‘চিকিৎসক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়।

দেশ ও সমাজের প্রতি তার অবদানের কথা মাথায় রেখে ভারত সরকার ১৯৬১ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ দিয়ে সম্মানিত করেন।

ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali

জন্ম১ জুলাই, ১৮৮২
জন্মস্থানপাটনা, বিহার, ভারত
মৃত্যু১ জুলাই, ১৯৬২ (৮০ বছর)
মৃত্যুস্থানকলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পিতাপ্রকাশচন্দ্র রায়
মাতাআঘোর কামিনী দেবী
পেশাডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
পুরস্কারভারতরত্ন (১৯৬১)
ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় জীবনী Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali

বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী

বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম

বিধান চন্দ্র রায় ১৮৮২ সালের ১ জুলাই বিহারের পাটনা জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন।

বিধানচন্দ্র রায়ের বাবা ও মায়ের নাম

তাঁর পিতার নাম প্রকাশ চন্দ্র রায় এবং মাতার নাম অঘোর কামিনী দেবী।

তার বাবার আদি বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে।

বিধানচন্দ্র রায়ের শিক্ষাজীবন

বিধান চন্দ্র রায়ে পাটনার কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট করেন এবং তারপর পাটনা কলেজ থেকে গণিতে অনার্স সহ বিএ করেন।

এরপর তিনি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেন।

তিনি উভয় প্রতিষ্ঠানেই নির্বাচিত হন কিন্তু তিনি মেডিকেল কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯০১ সালে কলকাতায় চলে যান। বিধানের মেডিকেল কলেজে খুব কষ্ট হয়।

তিনি যখন প্রথম বর্ষে ছিলেন তখন তাঁর বাবা ডেপুটি কালেক্টর পদ থেকে অবসর নেন এবং ফলস্বরূপ তিনি বিধান চন্দ্রকে টাকা পাঠাতে পারেননি।

এমন কঠিন সময়ে বিধানচন্দ্র রায় পাণ্ডিত্য ও মিতব্যয়ীতার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেন। বই কেনার মতো টাকা না থাকায় পড়াশুনা শেষ করার জন্য তিনি অন্যদের থেকে নোট এবং কলেজের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে যেতেন।

বিধানচন্দ্র রায় যখন কলেজে ঠিক সেই সময়েই ব্রিটিশ সরকার বাংলা ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা হচ্ছিল এবং লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক, প্রজিত সেনগুপ্ত এবং বিপিন চন্দ্র পালের মতো জাতীয়তাবাদী নেতারা এটি পরিচালনা করছিলেন।

বিধান চন্দ্র রায়ও এই আন্দোলনে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার মনকে বুঝিয়েছিলেন এবং পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছিলেন যাতে তিনি তার পেশায় শীর্ষস্থানীয় হয়ে দেশকে আরও ভালভাবে সেবা করতে পারেন।

Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali

বিধানচন্দ্র রায়ের কর্মজীবন

ডাক্তারি পড়া শেষ করে বিধানচন্দ্র রায় রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় নিযুক্ত হন। তিনি নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের সাথে কাজ করতে শুরু করেন। পেশার সাথে সম্পর্কিত কোন কাজকে তিনি ছোট মনে করতেন না। প্রয়োজনে তিনি একজন নার্সের ভূমিকাও পালন করতেন। অবসর সময়ে তিনি ডাক্তারিতে প্রাইভেট প্রাকটিস করতেন।

১৯০৯ সালে মাত্র ১২০০ টাকা নিয়ে সেন্ট বার্থলোমিউ হাসপাতালে M.R.C.P. এবং F.R.C.S. করার জন্য বিধান চন্দ্র রায় ইংল্যান্ডে চলে যান।

কলেজের ডিন একজন এশিয়ান শিক্ষার্থীকে ভর্তির পক্ষে ছিলেন না। তাই তিনি তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

কিন্তু বিধান চন্দ্র রায় তাঁর সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলেন। তাই তিনি আবেদনের পরে আবেদন করেছিলেন এবং অবশেষে ৩০ টি আবেদনের পরে ভর্তি হন।

তিনি মাত্র ২ বছর ৩ মাসে M.R.C.P. এবং F.R.C.S. সম্পন্ন করে ১৯১১ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ, ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল এবং কারমাইকেল মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন।

ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের মতে, দেশে প্রকৃত স্বরাজ তখনই আসবে যখন দেশবাসী শরীর ও মন উভয় দিক থেকেই সুস্থ থাকবে।

বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান

তিনি চিকিৎসা শিক্ষা সংক্রান্ত অনেক প্রতিষ্ঠানে তার অবদান রেখে গিয়েছেন।

বিধান চন্দ্র রায় যাদবপুর টি.বি. হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, কমলা নেহেরু হাসপাতাল, ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট এবং চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করেন।

১৯২৬ সালে তিনি চিত্তরঞ্জন সেবা সদন স্থাপন করেন।

প্রথমদিকে মহিলারা এখানে আসতে দ্বিধা করলেও ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় ও তাঁর দলের কঠোর পরিশ্রমে সকল সম্প্রদায়ের মহিলারা এখানে আসতে শুরু করে।

তিনি নার্সিং ও সমাজ সেবার জন্য নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৪২ সালে ডঃ বিধান চন্দ্র রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি কলকাতায় শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বজায় রাখতে সফল হন। তার চমৎকার সেবার জন্য তাকে ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ উপাধি দেওয়া হয়।

বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন এক ধন্বন্তরী চিকিৎসক। রোগীকে একবার দেখেই তিনি বলেদিতেন রোগীর কি রোগ হয়েছে।

ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় বিশ্বাস করতেন যে, তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তাই তাদের উচিত ধর্মঘট ও অনশন ছেড়ে নিজেদের ও দেশের উন্নয়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা।

ড বিধান চন্দ্র রায়ের জীবন কাহিনী

রাজনৈতিক জীবন

তিনি ১৯২৩ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ব্যারাকপুর নির্বাচনী এলাকায় শক্তিশালী নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জিকে পরাজিত করেন।

১৯২৫ সালে, তিনি হুগলি নদীতে ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার জন্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাবও পেশ করেছিলেন।

১৯২৮ সালে, ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘাতের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন।

১৯২৯ সালে তিনি দক্ষতার সাথে বাংলায় আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করেন এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচিত হন।

ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে বেআইনি ঘোষণা করে এবং ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সহ সকল সদস্যকে গ্রেফতার করে জেলে বন্দি করে।

১৯৩১ সালে ডান্ডি মার্চের সময় কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশনের অনেক সদস্য জেলে ছিল। তাই কংগ্রেস পার্টি বিধানচন্দ্র রায়কে জেলের বাইরে থাকতে এবং কর্পোরেশনের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে বলে।

বিধানচন্দ্র রায় কলকাতার মেয়র

১৯৩৩ সালে বিধানচন্দ্র রায় কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে কর্পোরেশন বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, উন্নত রাস্তা, ভাল আলো এবং ভাল জল বিতরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করে।

ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় প্রবন্ধ রচনা

বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী

স্বাধীনতার পর কংগ্রেস পার্টি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নাম প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তিনি চিকিৎসা পেশায় মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন।

মহাত্মা গান্ধী তাকে বোঝালে তিনি পদটি গ্রহণ করেন এবং ২৩ জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন।

ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় যখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন তখন রাজ্যের পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। পশ্চিম বঙ্গ ছিল সাম্প্রদায়িক হিংসর কবলে। এর পাশাপাশি খাদ্য ঘাটতি, বেকারত্ব এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুদের আগমনও উদ্বেগের কারণ ছিল।

তিনি কঠোর পরিশ্রম করে তিন বছরের মধ্যে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্যান্য সমস্যাও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।

বিধানচন্দ্র রায়ের ভারত রত্ন

ভারত সরকার বিধান চন্দ্র রায়ের অসামান্য অবদানের জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ সালে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ দিয়ে তাকে সম্মানিত করে।

বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যু

১৯৬২ সালের ১ জুলাই তাঁর ৮০তম জন্মদিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একটি ‘নার্সিং হোম’ চালানোর জন্য তার বাড়ি দান করেছিলেন। তাঁর মা ‘অঘোরকামিনী দেবীর’ নামে এই নার্সিং হোমের নামকরণ করা হয়েছিল।

Year Wise ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় জীবনী Timeline

  • ১৮৮২: বিধান চন্দ্র রায় ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন,
  • ১৮৯৬: বিধান চন্দ্র রায়ের মা মারা যান,
  • ১৯০১: পাটনা ছেড়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য কলকাতায় যান,
  • ১৯০৯: সেন্ট বার্থলোমিউ’স কলেজে পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে যান,
  • ১৯১১: M.R.C.P. এবং F.R.C.S. শেষ করে ভারতে ফিরে আসেন,
  • ১৯২৫: সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ,
  • ১৯২৫: হুগলির দূষণ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিধানসভায় রাখেন,
  • ১৯২৮: সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটিতে নির্বাচিত হন,
  • ১৯২৯: বাংলায় আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করেন,
  • ১৯৩০: কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচিত হন,
  • ১৯৩০: গ্রেফতার করে আলিপুর জেলে পাঠানো হয়,
  • ১৯৪২: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীর চিকিৎসা করেন,
  • ১৯৪২: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত হন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বজায় রেখেছিলেন,
  • ১৯৪৪: ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন,
  • ১৯৪৮: ২৩ জানুয়ারি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন,
  • ১৯৫৬: লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা,
  • ১৯৬১: ৪ ফেব্রুয়ারি, দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন,
  • ১৯৬২: ১লা জুলাই মৃত্যু বরণ করেন,
  • ১৯৭৬: জাতীয় পুরস্কার ‘ড. বি. সি. রায় পুরস্কার’ দেওয়া শুরু হয়।

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায়ের জীবন কাহিনী


আমাদের আজকের প্রতিবেদন ‘ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনী Dr Bidhan Chandra Roy Biography in Bengali‘ পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি ‘বিধান চন্দ্র রায় প্রবন্ধ রচনা’ পড়ে আপনি বিধান চন্দ্র রায়ের জীবন কাহিনী সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন।

Leave a Comment