Home » উৎসব » জামাই ষষ্ঠী কত তারিখে 2023 Jamai Sasthi 2023 Date and Time in Bengali Calendar

জামাই ষষ্ঠী কত তারিখে 2023 Jamai Sasthi 2023 Date and Time in Bengali Calendar

এবছর জামাই ষষ্ঠী কত তারিখে 2023 সালে: ২৫শে মে, ২০২৩, বৃহস্পতিবার (১০ই জৈষ্ঠ, ১৪৩০)

জামাই ষষ্ঠী হল বাঙালিদের একটি লৌকিক অনুষ্ঠান। এই শুভ দিনে বিবাহিত কন্যার বাবা মা মেয়ে ও জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করে।

এই ভাবে জামাইকে খুশি করে ও সম্মান জানিয়ে শশুর বাড়ির লোকেরা মেয়ে জামাইকে নিয়ে মেতে ওঠে জামাই ষষ্ঠীর মহা উৎসবে।

জামাই ষষ্ঠীর ইতিহাস

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে এক সময় সংস্কার ছিল যে যতদিন না বিবাহিত মেয়ের কোনো সন্তান হবে ততদিন মেয়ের বাবা ও মার মেয়ের শশুর বাড়ি যাওয়া উচিত নয়।

অনেক সময় মেয়েদের সন্তান ধারণে সমস্যা বা নবজাত সন্তান মারা গেলে মেয়ের বাবা মাকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হত মেয়ের শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য।

এই সমস্যার সমাধান ও বাবা মায়ের মেয়ের মুখ দর্শন করার জন্য সমাজের বিধান দাতারা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নেয় ‘জামাই ষষ্ঠী’ হিসাবে। যেখানে মেয়ে ও জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করতে হবে এবং সেইসঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করতে হবে যাতে মেয়ে খুব শীঘ্র সন্তান লাভ করতে পারে।

জামাই ষষ্ঠী কত তারিখে 2023

২৫ মে, ২০২৩, বৃহস্পতিবার (১০ জৈষ্ঠ ১৪৩০)।

জামাই ষষ্ঠীর সময় ও কাল

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত করার নিয়ম। সধবা ছেলের মায়েরাই এই ব্রত নিতে ও পালন করতে পারে।

Jamai Sasthi 2023 Date and Time in Bengali Calendar

25 May, 2023, Thursday (১০ জৈষ্ঠ ১৪৩০).

জামাই ষষ্ঠী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান

ফল, ৬টি পান, ৬টি সুপুরি, বাঁশপাতা, হলুদে ছোপান কাপড়ের টুকরো, নতুন ৬ গাছা সুতো, তেল-হলুদ, চিঁড়ে, খই ও দই।

২০২৩ সালের জামাই ষষ্ঠীর নিয়ম কানুন

প্রত্যেক বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত করতে হয়।

পিটুলি দিয়ে একটি কালো বেড়াল এঁকে একটা পিটুলির কঙ্কণ গড়ার নিয়ম। ফল-মূলে বাটা সাজাতে হবে।

তারপর ৬টা পান ও ৬টা সুপুরি হলুদে ছোপানো কাপড়ের টুকরো বাঁশ পাতায় জড়িয়ে, ৬ গাছা সুতো পাকিয়ে ও হলুদ মাখিয়ে তার সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। এই সুতোকে ‘ষাট সুতো’ বলা হয়।

চিঁড়ে, খই, দই, তৈল ও হলুদ দিয়ে মা ষষ্ঠীর পুজো করার নিয়ম।

পুজোর শেষে ছেলে-মেয়েদের কপালে হলুদ ছুঁইয়ে ঐ ষাট সুতো তাদের ডান হাতে বেঁধে দিতে হয়।

পুজোর শেষে ব্রতকথা শুনে ব্রতীকে ফল খেয়ে থাকতে হবে।

জামাই ষষ্ঠী ব্রত কথা গল্প

এক ব্রাহ্মণীর তিন ছেলে আর তিন বউ ছিল।

এই তিন বউয়ের ভেতর ছোটবউয়ের খাবার জিনিসের ওপর খুব লোভ ছিল। ঘরের খাবার জিনিস সে নিজে চুরি করে খেতো আর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিতো বাড়ির পোষা একটা কালো বেড়ালের ওপর।

বেড়ালটা ছিল মা ষষ্ঠীর বাহন, সে রোজ গিয়ে মা ষষ্ঠীকে এই চুরি করে খাওয়ার সব কথা বলে দিতো। কিন্তু ছোট বউ নিজের দোষ কখনো স্বীকার করতো না।

এমনি করে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অরণ্য ষষ্ঠীর ব্রতের দিন এসে পড়ল। ব্রাহ্মণী ব্রত করবে, বাড়িতে হবে আনন্দ-উৎসব।

ব্রাহ্মণী পুজোর জন্যে নিজের হাতে পায়েস, মিষ্টি, ক্ষীর ও নাড়ু তৈরী করল এবং ছোটবউকে বলল, ‘বউমা, আমি স্নানটা সেরে আসি, তুমি ততক্ষণ এইখানে বসো – দেখো যেন বেড়ালটা কোনো জিনিসে মুখ না দেয়।

ব্রাহ্মণী চলে গেলো স্নান করতে, এদিকে এই সব ভালো ভালো খাবার দেখে ছোটবউ আর লোভ সামলাতে পারলো না। মিষ্টি, ক্ষীর, পায়েস, দই যা পারলো তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল, আর একটু দই নিয়ে বেড়ালটার মুখে মাখিয়ে দিল।

এদিকে ব্রাহ্মণী স্নান করে এসে দেখল যে, খাবারগুলো সব কে যেন খাবলে খেয়ে গেছে।

ব্রাহ্মণী ছোটবউকে তখন জিগ্যেস করল, ‘ও বউমা! পুজোর মিষ্টিগুলো কে এইরকম করে খাবলে খেয়ে গেল?’

ছোটবউ বলল, ‘কী জানি মা! একটু অন্যমনস্ক হয়ে ছিলুম সে সময় আমার চোখে ধুলো দিয়ে বেড়ালটা সব খেয়ে নিয়েছে। ওই দেখুন না, ওর মুখে সব লেগে রয়েছে।’ এই বলে ছোটবউ বেড়ালটাকে বেশ দু’চার ঘা দিয়ে দিল।

জামাই ষষ্ঠী কত তারিখে 2023 / Jamai Sasthi 2023 Date and Time in Bengali Calendar: 25 May, 2023, Thursday.

শেষে ব্রাহ্মণী আবার সব নতুন করে যোগাড় করে পুজোর ব্যবস্থা করল।

এদিকে বেড়ালটা কাঁদতে কাঁদতে বনে চলে গেল এবং যেখানে দেবী অরণ্যষষ্ঠী রয়েছেন তাঁর কাছে গিয়ে সব কথা বলে দিল।

সব শুনে ষষ্ঠী দেবী বললেন, ‘আমি সব জানি – তুই কাদিস নি – আমি শিগগিরই ছোটবউকে এর প্রতিফল দেবো।’

এই ঘটনার কয়েক মাস পরে ছোট বউয়ের সন্তান সম্ভাবনা দেখা দিল এবং দশ মাস দশ দিন পরে সে ফুটফুটে সুন্দর চাঁদের মতন একটি ছেলে প্রসব করল।

ব্রাহ্মণী নাতির মুখ দেখে খুব খুশি হল এবং গরীবদের ডেকে খুব দান ধ্যান করতে লাগল।

এদিকে ছোটবউ তার ছেলেকে কোলের কাছে নিয়ে রাত্তিরে নিশ্চিন্ত হয়ে শুলো। কিন্তু হায়, সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গাতে দেখল ছেলে তার কাছে নেই।

শাশুড়ী ও বৌয়ের খুব ভাবনা হল, তারা বেশ কয়েকজন লোক দিয়ে চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল, কিন্তু ছেলেকে কোথাও পাওয়া গেল না।

এই রকম করে ছোটবউয়ের পর পর সাতটি ছেলে আর একটি মেয়ে হল, কিন্তু সব কটিই হারিয়ে গেল। রাত্তিরে ছোটবউ ছেলে নিয়ে শুতো আর সকাল হলেই ছেলে পাওয়া যেত না।

তখন পাড়ার সকলে বলতে লাগল যে, ছোটবউ মানুষ নয় নিশ্চয় রাক্ষসী, ছেলেগুলোকে সেই নিশ্চয় খেয়ে ফ্যালে। এই বউকে কিছুতেই বাড়িতে রাখা উচিত নয়, ওকে এখুনি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

পাড়ার লোকের সব কথাই ছোটবউয়ের কানে গেল। সে আর সহ্য করতে পারলো না, নিজেই বাড়ি ছেড়ে একদিন বনে চলে গেল।

সে বনে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, ‘আমার এ কী হল মা ষষ্ঠী? তুমি আমায় সাতটি ছেলে আর একটি মেয়ে দিয়েও সব কেড়ে নিলে কেন মা! আমাকেও তুমি নিয়ে নাও, আমি একদিনও আর বাঁচতে চাই না।’

ছোটবউকে এইভাবে আক্ষেপ করতে দেখে মা অরণ্য ষষ্ঠীর দয়া হল, তখন তিনি এক বুড়ীর রূপ ধরে তার কাছে এলেন।

তিনি তাকে বললেন, ‘এই বন-বাদাড়ে, তুমি একলা বসে কাঁদছো কেন মা?’

ছোটবউ তখন সমস্ত ঘটনা মা ষষ্ঠীকে খুলে বলল।

মা ষষ্ঠী তখন বললেন, ‘ওরে বেটি! আসল কথাগুলো সব লুকিয়ে রাখলি কেন? তুই যে লুকিয়ে লুকিয়ে মাছ, দুধ, পুজোর মিষ্টি সব নিজে খেয়ে ফেলে শাশুড়ীর কাছে কালো বেড়ালটার নামে দোষ দিতিস তাতে তোর লজ্জা হোত না? সেই কারণেই আজ তোর এই দুর্দশা হয়েছে।’

তখন ছোটবউ, বুড়ীর পায়ের ওপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, ‘তুমি কে মা? কেমন করে আমার সব কথা জানলে। আমায় দয়া করো, তা না হলে আমি তোমার পা ছাড়বো না।’

মা ষষ্ঠী ছোটবউয়ের কাতরতা দেখে বললেন, ‘বাছা! আমিই মা ষষ্ঠী, পৃথিবীর লোক যা করে আমি সব জানতে পারি।’

ছোটবউ তখন আবার কেঁদে বলতে লাগল, ‘মা। আমি খুবই অন্যায় করেছি, আমার পাপের শেষ নেই, আজ যখন দয়া করে আমায় দেখা দিয়েছো তখন তুমি আমায় রক্ষে করো মা – তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।’

মা ষষ্ঠী তখন বললেন, ‘দ্যাখো পথের ধারে ওইখানে একটা মরা বেড়াল পচে পড়ে রয়েছে। যদি এক হাঁড়ি দই ওই বেড়ালটার গায়ে ঢেলে দিয়ে সেই দই জিভ দিয়ে চেটে ফের হাঁড়িতে তুলতে পারো, তবে তোমার সব ছেলে-মেয়ে আবার ফিরে পাবে।’

এই কথা শুনে ছোটবউ একটুও দেরি করল না, এক হাঁড়ি দই এনে সেই পচা বেড়ালটার গায়ে ঢেলে দিল এবং পরে জিভ দিয়ে চেটে সমস্ত দই আবার হাঁড়িতে তুলে এনে মা ষষ্ঠীকে দেখালো।

মা ষষ্ঠীও ছোট বউয়ের ছেলে মেয়েদের নিয়ে আগে থেকেই দাঁড়িয়েছিলেন।

তিনি ছেলে‌ মেয়েদের ছোটবউকে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও তোমার ছেলে-মেয়ে। এই অমৃত দই দিয়ে সকলের কপালে ফোঁটা দাও, আর এদের নিয়ে আনন্দে সুখে ঘরকন্না কর। আর কখনও পুজোর জিনিস লুকিয়ে খেয়ে আমার বাহনের নামে দোষ দিও না।’

তিনি আরো বললেন, ‘ছেলে-মেয়েদের “দূর হ, মরে যা”, কখনো বলো না, অন্য কাউকে যদি বলতে শোন, তো তখন, ‘ষষ্ঠীর দাস’ ও ‘ষাট ষাট’ বলবে।

এই সব কথা বলে মা অরণ্যষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

ছোটবউ তখন তার সাত ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে এসে তার শাশুড়ীকে প্রণাম করল।

শেষে ষষ্ঠীদেবীর সব কথা শাশুড়ীকে জানালো।

ব্রাহ্মণী সব শুনে একেবারে অবাক হয়ে গেল। এখন নাতি-নাতনীকে পেয়ে তার খুব আনন্দ হল।

ব্রাহ্মণী অল্পদিনের মধ্যে নাতি-নাতনীর বিয়ে দিল।

পরের বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে খুব জাঁক-জমক করে ছোট বউ অরণ্যষষ্ঠীর ব্রত করল এবং মেয়ে-জামাইকে আনিয়ে জামাইয়ের কপালে দইয়ের ফোঁটা দিল।

সেই থেকে মা অরণ্যষষ্ঠীর মাহাত্ম্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

এই ব্রতকেই জামাই ষষ্ঠী বা ষষ্ঠী বাটা বলা হয়।

জামাই ষষ্ঠী ব্রতের ফল

এই ব্রত ছেলে মেয়েদের মায়েরা পালন করলে তাদের ছেলে মেয়েদের প্রভূত কল্যাণ হয়ে থাকে।

জামাই ষষ্ঠী ১৪৩০ বাংলা তারিখ কত: ১০ই জৈষ্ঠ, ১৪৩০, বৃহস্পতিবার (২৫শে মে, ২০২৩)

আরও পড়ুন:


আশা করি, আজকের প্রতিবেদন “জামাই ষষ্ঠী কত তারিখে 2023 – Jamai Sasthi 2023 Date and Time in Bengali Calendar” পড়ে আপনি জামাই ষষ্ঠী ২০২৩ কবে এবং জামাই ষষ্ঠী সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন।

আর অবশই এই লেখাটি তাদের সাথে Share করুন যারা এখনো জানে না জামাই ষষ্ঠী ১৪৩০ কবে।

Leave a Comment