Home » Biography » গৌতম বুদ্ধের জীবনী বাংলা Gautam Buddha Biography in Bengali বুদ্ধ পূর্ণিমা

গৌতম বুদ্ধের জীবনী বাংলা Gautam Buddha Biography in Bengali বুদ্ধ পূর্ণিমা

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের জীবনী বাংলা Gautam Buddha Biography in Bengali:

জন্মকপিলবস্তু (লুম্বিনি) ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
মৃত্যুকুশীনগর (উত্তরপ্রদেশ) ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
পিতাশুদ্ধোধন
মাতামহামায়া
স্ত্রীযশোধরা
ছেলেরাহুল
ভাইদেবদত্ত
জ্ঞান প্রাপ্তিবোধগয়া (বিহার)
অন্যান্য নামসিদ্ধার্থ, গৌতম বুদ্ধ, শাক্য মুনি
যে জন্য পরিচিতবৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
মৃত্যুর সময় বয়স৮০ বছর

গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনী Gautam Buddha Biography in Bengali:

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধ ছিলেন একজন বিখ্যাত ধর্মীয় সংস্কারক এবং মহান দার্শনিক যিনি একটি নতুন ধর্ম বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মানুষের মনে একটি নতুন এবং উচ্চতর দার্শনিক আদর্শ তৈরি করেছিলেন।

ভগবান মহাত্মা বুদ্ধকে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তাঁর জীবনের সব ঘটনাই বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, যেমন – বুদ্ধচরিত মহাবাস্তু, সুত্তনিপাত, ললিতবিস্তার, ত্রিপিটক ইত্যাদি।

কিন্তু এই সমস্ত গ্রন্থের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ত্রিপিটকে মহাত্মা বুদ্ধের জীবন সম্পর্কিত প্রতিটি ঘটনার বিশদ বিবরণ দেওয়া আছে।

এই সমস্ত গ্রন্থ এবং ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে আজ আমরা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরছি মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের জীবনী এবং তাঁর জীবন ও তাঁর শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত সমস্ত প্রধান ঘটনাগুলোকে।

Mahatma Gautam Buddha Jivani in Bengali

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের জীবনী বাংলা । Gautam Buddha Biography in Bengali

সূচিপত্র

গৌতম বুদ্ধের জন্ম ও জন্মস্থান

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধ নেপালের কপিলবাস্তু শাক্য প্রজাতন্ত্রের ক্ষত্রিয় বংশে ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।

গৌতম বুদ্ধের বাবার নাম কি?

মহাত্মা বুদ্ধের পিতার নাম ছিল শুদ্ধোধন।

তিনি হিমালয়ের কাছে অবস্থিত কোশল রাজ্যের রাজা ছিলেন এবং তিনি শাক্য বংশের প্রধান ছিলেন।

গৌতম বুদ্ধের মাতার নাম কি?

গৌতম বুদ্ধের মাতার নাম মহামায়া।

মহারানী মায়াদেবী যখন দেবদহে যাচ্ছিলেন সেই পথে লুম্বিনী জঙ্গলে মহাত্মা বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল।

নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলবাস্তু ও দেবদাহের মধ্যবর্তী নোতনবা স্টেশন থেকে ৮ মাইল দূরে রুকমিন্দেই নামক স্থান আছে। যেখানে লুম্বিনী নামে একটি বন ছিল। এখানেই তাঁর জন্ম হয়েছিল।

শৈশবকাল

শৈশবকালে মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের নাম ছিল সিদ্ধার্থ।

সিদ্ধার্থের জন্মের পর ঋষিদের ডাকা হয়েছিল তাঁর নাম রাখার জন্য। বুদ্ধের জন্মকুণ্ডলী দেখে ঋষিরা বলেছিলেন, আপনার ছেলের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। এই সমগ্র সৃষ্টিকে জ্ঞান দিয়ে আলোকিত করবে।

ঋষিরা আরও বলেছিলেন, সিদ্ধার্থ যেন কোন প্রকার কষ্ট বা দুঃখ অনুভব না করেন, অন্যথায় তার মন অশান্ত হয়ে যাবে।

রাজা শুদ্ধোধন চেয়েছিলেন তার পুত্র একজন সম্রাট হয়ে সমগ্র বিশ্বকে শাসন করুক। তাই রাজা শুদ্ধোধন সিদ্ধার্থের বসবাসের জন্য তিনটি প্রধান ঋতুর অনুরূপ তিনটি প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন যাতে সিদ্ধার্থ কোনো প্রকার দুঃখ বা কষ্ট অনুভব করতে না পারেন।

তাকে বাইরের জগৎ থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছিল। তাঁর দেখাশোনা করার জন্য প্রাসাদে অনেক দাস এবং দাসী তার রাখা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: শুভ অক্ষয়া শুভেচ্ছা বার্তা ও ছবি

গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা

মহাত্মা বুদ্ধ তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গুরু বিশ্বামিত্রের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

তিনি তাঁর গুরু বিশ্বামিত্রের কাছ থেকে বেদ ও উপনিষদের শিক্ষা পেয়েছিলেন। বেদ ও উপনিষদের পাশাপাশি তিনি যুদ্ধ ও রাজ্য পালনের শিক্ষাও নিয়েছিলেন।

তিনি ঘোড়দৌড়, তলোয়ার লড়াই, কুস্তি, তীর খেলাও শিখেছিলেন। রথ চালানোতে কেউ তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারত না।

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের স্ত্রীর ও ছেলের নাম কি?

১৬ বছর বয়সে রাজকুমারী যশোধরার সাথে সিদ্ধার্থের বিয়ে হয়।

তিনি স্ত্রী যশোধরার সাথে বাবার তৈরি ভোগ বিলাসে সমৃদ্ধ একটি প্রাসাদে থাকতে শুরু করেন এবং একটি পুত্র লাভ করেন যার নাম রাখেন রাহুল।

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের গৃহ ত্যাগ – মহাভিনিষ্ক্রমণ

জাগতিক মোহ সিদ্ধার্থকে জাগতিক বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখতে পারেনি। তিনি বৈরাগী হয়ে যান এবং পরিবার ত্যাগ করে তিনি জ্ঞানের সন্ধানে যাত্রা শুরু করেন। এই ঘটনা মহাভিনিষ্ক্রমণ নামে পরিচিত।

গৌতম বুদ্ধ চারটি কারণে সন্ন্যাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

একদিন রথে চড়ে পথ দিয়ে যাবার সময় চারটি দৃশ্য গৌতম বুদ্ধের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

এই দৃশ্যগুলি ছিল – একজন বৃদ্ধ, একজন মৃত ব্যক্তি, একজন রোগী এবং একজন সন্ন্যাসীকে দেখা।

বৃদ্ধ মানুষ, অসুস্থ ও মৃত ব্যক্তিকে দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে, মানবদেহের ক্ষয় ও অবসান নিশ্চিত।

এর পর তিনি একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পেলেন। সন্ন্যাসীর বার্ধক্য ও অসুস্থতার মতো কোনো সমস্যা ছিল না এবং তিনি শান্তি লাভ করেছিলেন।

সিদ্ধার্থও সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনিও সন্ন্যাসীর পথ অনুসরণ করবেন।

এর কিছু সময় পরে, ২৯ বছর বয়সে, এক রাতে তিনি বাড়ি ছেড়ে সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে যান। বৌদ্ধ গ্রন্থে এই ঘটনার নামকরণ করা হয়েছে মহাভিনিষ্ক্রমণ।

তিনি বৈশালীর আলার কলামকে তাঁর প্রথম গুরু হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাংখ্যবাদ শিখেছিলেন। কিন্তু তবুও তিনি শান্তি পাননি।

আরো পড়ুন: গৌতম বুদ্ধের ১৪০ টি বাণী

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের জ্ঞানার্জন – নির্ভানা

গৃহত্যাগের পর, তিনি তাঁর প্রথম আধ্যাত্মিক গুরু আলার কলামের কাছ থেকে সন্ন্যাস বিদ্যার শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি তপস্যা শুরু করেন।

প্রথমে তিনি সামান্য অন্ন ও জল পান করে ধ্যান শুরু করেন। কিছু দিন পর তিনি অন্ন-জল ত্যাগ করেন এবং সাধনা শুরু করেন।

তিনি ৬ বছর কঠোর সাধনা করেছিলেন। তবুও তিনি জ্ঞান অর্জন করতে পারেননি।

এ সময় তার শরীর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এভাবে শরীরে অত্যাচার করে তার কিছু লাভ হবে না।

এবার তিনি মধ্যম পথ খুঁজতে লাগলেন।

একদিন রাতে সুজাতা নামের এক গ্রাম্য মেয়ের কাছ থেকে খির খেয়ে উপোস ভাঙলেন। স্নান সেরে পরিস্কার হয়ে তিনি একটা বড় অশ্বত্থ গাছের নিচে বসে ধ্যান শুরু করলেন।

তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি যতক্ষণ না জ্ঞান অর্জন করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সাধনায় নিমগ্ন থাকবেন।

সপ্তম দিনে তিনি পরম জ্ঞান লাভ করেন। এই ঘটনা নির্ভানা নামে পরিচিত।

এরপর তিনি সিদ্ধার্থ বুদ্ধ নামে পরিচিত হন।

তিনি যে স্থানটিতে জ্ঞান লাভ করেছিলেন সেই স্থান বোধগয়া নামে পরিচিত, যা বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের গয়া জেলায় অবস্থিত।

যে অশ্বত্থ গাছের নীচে তিনি জ্ঞান প্রাপ্ত করেছিলেন সেটাকে বোধিবৃক্ষ বলা হয়।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের প্রথম উপদেশ – ধর্মচক্র প্রবর্তন

জ্ঞান লাভের পর, তিনি সারনাথে তাঁর প্রথম ধর্মোপদেশ দেন পাঁচজন ব্রাহ্মণকে যারা গৌতম বুদ্ধকে উরবেলায় রেখে চলে গিয়েছিলেন।

এরপর ঐ সকল ব্রাহ্মণগণ তার অনুসারী হয়ে যায়। এই ঘটনাকে বিভিন্ন বুদ্ধ গ্রন্থে ধর্মচক্র প্রবর্তন বলা হয়েছে। এই ঘটনার পর মহাত্মা বুদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচার শুরু করেন।

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের মূল উপদেশাবলী ও শিক্ষা

চারটি আর্যসত্য

মহাত্মা বুদ্ধ চারটি মহৎ সত্য তুলে ধরেন। তাঁর দ্বারা উত্থাপিত মহৎ সত্যগুলোকে বলা হয় ‘আর্যসত্য’।

এই চারটি ‘আর্যসত্য’ হল –

  1. . জগৎ দুঃখময় – মহাত্মা বুদ্ধের মতে, মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণীর দুঃখ আছে।
  2. দুঃখের কারণ আছে – বুদ্ধ দুঃখের কারণ হিসাবে আসক্তির কথা বলেছেন। আসক্তির সাথে মিলিত আকাঙ্ক্ষা মানুষকে বারবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ফেলে। মানুষ আসক্তি এবং তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য ছটপট করা শুরু করে। এই কারণে মানুষের মনে কখনও শান্তি থাকে না। এটিই দুঃখের কারণ।
  3. দুঃখের নিবারণ করা সম্ভব – মানুষ আসক্তি ত্যাগ করে দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারে। দুঃখের অবসান হলে মানুষ পরমানন্দ লাভ করে।
  4. অষ্টাঙ্গিক মার্গ – মহাত্মা বুদ্ধ আসক্তি দমন এবং মোক্ষলাভের জন্য ৮ টি নীতি বা আদর্শ পালনের কথা বলেছেন। মহাত্মা বুদ্ধের দ্বারা নির্দেশিত এই ৮ টি নীতিকে ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ বলা হয়।

গৌতম বুদ্ধের অষ্টমার্গ

  1. সৎ বাক্য
  2. সৎ কর্ম
  3. সৎ চেষ্টা
  4. সৎ জীবিকা
  5. সৎ সংকল্প
  6. সৎ চিন্তা
  7. সৎ দৃষ্টি
  8. সৎ সমাধি

মধ্যপন্থা‘ অনুশীলনের জন্য এই ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ পালন করতে হবে।

গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু – মহাপরিনির্বাণ

গৌতম বুদ্ধ ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে মারা যান। বুদ্ধের দেহত্যাগের এই ঘটনাটি ‘মহাপরিনির্বাণ’ নামে পরিচিত।

ভগবান গৌতম বুদ্ধ কিভাবে মারা যান?

কিছু বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুসারে, একদিন তিনি পাভাপুরী হয়ে কুশীনগরে পৌঁছেছিলেন যেখানে কুন্না নামে এক ব্যক্তি একদিন বিকেলে বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের একটি ভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

তিনি তাদের সবাইকে খির, ভাত ও রুটি খেতে দিয়েছিলেন।

বুদ্ধ জানতে পারলেন যে খীর বিষাক্ত। তাই মহাত্মা বুদ্ধ খীর খেলেন এবং সমস্ত শিষ্যদের বললেন যে তোমরা সবাই ভাত ও রুটি খাও। শুধু আমিই খির খাব।

তারপর বুদ্ধ কিছু খীর খেয়ে অবশিষ্ট খীর মাটির নিচে পুঁতে ফেললেন। এর পর বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের নিয়ে কুশিমারায় গেলেন।

পথে হঠাৎ মহাত্মা বুদ্ধ প্রচণ্ড ঘামতে শুরু করলেন এবং তাঁর স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হয়ে গেল। যার ফলে শিষ্যরা বুঝতে পারলেন যে ভগবান বুদ্ধ যে খির খেয়েছিলেন তা বিষাক্ত ছিল, যা সম্ভবত কুন্নাও জানত না।

বুদ্ধ তাঁর প্রিয় শিষ্য আনন্দকে বললেন, “আনন্দ, আমি খুব ক্লান্ত, এখানে বিশ্রাম করব।”

এরপর তিনি বললেন, “আনন্দ আমার জন্য কুকুত্থা নদী থেকে জল নিয়ে এসো।”

এর পর বুদ্ধ স্নান করে সেখানে বালির উপর কাপড় বিছিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তিনি আবার হাঁটা শুরু করলেন। তারা হিরণ্যকল্যপ নদী পার করে কুশিমারায় পৌঁছে গেলেন।

এর পর তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি জন্মের পর দুই বছর অরণ্যে ছিলাম। তাই আমি শেষ দুই বছরও অরণ্যের মধ্যে কাটাব। এখন আমার শেষ সময় এসে গেছে।”

আনন্দ খুব দুঃখ পেয়ে কাঁদতে লাগলেন।

বুদ্ধ তা জানতে পেরে আনন্দ কে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কাঁদছ কেন? আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম যে, যে বস্তু সৃষ্টি হয়েছে তার শেষ নিশ্চিত। নির্বাণ অবশ্যম্ভাবী এবং স্বাভাবিক। অতএব তুমি কাঁদছ কেন?”

মহাত্মা বুদ্ধ তাঁর শিষ্য আনন্দকে আবার বললেন, “আমার মৃত্যুর পর আমাকে গুরুরূপে অনুসরণ করবে না।”

গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পরের ঘটনা

গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর তার পুত্র রাহুলও সন্ন্যাসী হন। কিন্তু বুদ্ধ তাকে কোনো গুরুত্ব দেননি। কিছু সময় পর রাহুলও মারা যান।

বুদ্ধের স্ত্রী যশোধরা শেষ অবধি মহাত্মা বুদ্ধের শিষ্যা হননি।

গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের পর ছ’দিন ধরে দিক দিগন্ত থেকে বহু মানুষ তাঁকে দেখতে আসেন। সপ্তম দিনে তাঁর মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

তারপর মগধের রাজা অজাতশত্রু, কপিলাবস্তুর শাক্য ও বৈশালীর বিচ্ছবিদো প্রমুখের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়।

ঝগড়া শান্ত হলে দ্রোণ নামে এক ব্রাহ্মণ সবার মধ্যে সমঝোতা করে বললেন যে দেহাবশেষ আটটি ভাগে ভাগ করতে হবে। তাই করা হল। আটটি রাজ্যে আটটি স্তূপ তৈরি করা হয়েছিল এবং অবশিষ্টাংশগুলি রাখা হয়েছিল।

কথিত আছে যে পরবর্তীকালে সম্রাট অশোক সেগুলো বের করে ১৪০০ স্তূপে ভাগ করেছিলেন।

বুদ্ধের নির্বাণের ঘটনাকে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে মহাপরিনির্বাণ বলা হয়েছে। যার অর্থ হল প্রদীপ নিভে যাওয়া অর্থাৎ নিজের সমস্ত কাজ এবং জীবন-মৃত্যুর সম্পর্ক থেকে মুক্তি

কিছু বিশ্বাস অনুসারে, তার নির্বাণ বিষ মেশানো খীরের কারণে হয়নি। উপরন্তু তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাঁর শিষ্যরা এখন এই জ্ঞানকে আরও এগিয়ে নিতে সক্ষম এবং এখনই তাঁর চলে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তখন তিনি নিজের ইচ্ছায় পরিনির্বাণ গ্রহণ করেছিলেন।

ভগবান মহাত্মা বুদ্ধের শেষ কথা –

“হে ভিক্ষুগণ, এই সময়ে আমি তোমাদের এতটুকুই বলি যে, তোমাদের সকল সংস্কার বিনষ্ট হতে চলেছে। সেজন্য গাফিলতি না করে নিজের কল্যাণ করো।”

গৌতম বুদ্ধের জীবনী বাংলা

মহাত্মা বুদ্ধের জীবনের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • তিনি বৈশাখের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
  • বৈশাখ পূর্ণিমার দিনে তিনি বোধি লাভ করেন।
  • বৈশাখ পূর্ণিমার দিনেই তিনি পরিনির্বাণ লাভ করেন।

মহাত্মা বুদ্ধের মধ্যপন্থা অবলম্বনের পেছনের গল্প

একদিন কয়েকজন নর্তকী পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক নর্তকী বললেন, বীণার তার ঢিল দিও না, নইলে সুর ভালো হবে না এবং এটা এতটাও আঁটসাঁট করে রেখো না যেন এটা ছিঁড়ে যায়।

ভগবান বুদ্ধের এই চিন্তাধারাটি খুব পছন্দ হয় এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি মধ্যপন্থা অনুসরণ করবেন।

Gautam Buddha Statue
Gautam Buddha Statue

Affiliate Disclosure: Please note that some of the links above are affiliate links and add No additional cost to you. If you purchase any product using these links we will get a small commission as compensation without costing you anything extra. You can consider this as a reward for our hard work to create awesome content and maintain this website free for you.

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQ)

গৌতম বুদ্ধ কে ছিলেন?

বুদ্ধ ছিলেন একাধারে ধর্মীয় সংস্কারক, মহান দার্শনিক, তপস্বী এবং পরম জ্ঞানী।

গৌতম বুদ্ধের জন্ম তারিখ কি?

তিনি ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈশাখের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

গৌতম বুদ্ধ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

নেপালের কপিলবাস্তুর লুম্বিনি উদ্দানে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান বর্তমান নাম কি?

রুমিনদেহি জেলা, নেপাল।

গৌতম বুদ্ধ কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেন?

শাক্য নামক ক্ষত্রিয় বংশ

গৌতম বুদ্ধের আসল নাম কি?

সিদ্ধার্থ

গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন নাম কি কি?

সিদ্ধার্থ, গৌতম বুদ্ধ, শাক্য মুনি, শাক্য সিংহ

গৌতম বুদ্ধের বাবার নাম কি?

শুদ্ধোধন

গৌতম বুদ্ধের মায়ের নাম কি?

মহামায়া

গৌতম বুদ্ধের ঘোড়ার নাম কি?

চেতক (কনথক Kanthaka)

গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু কোথায় হয়?

কুশীনগরে

গৌতম বুদ্ধ কোথায় নির্বাণ লাভ করেছিলেন?

বিহারের বুদ্ধগয়াতে ফালগু নদীর তীরে একটি বট গাছের নীচে নির্বাণ লাভ করেছিলেন। যে স্থানে তিনি জ্ঞান লাভ করেছিলেন তাকে বর্তমানে বোধগয়া বলা হয় এবং যে গাছের নীচে তিনি জ্ঞান লাভ করেছিলেন তাকে বোধিবৃক্ষ বলা হয়। মহাত্মা বুদ্ধ যখন জ্ঞান লাভ করেছিলেন তখন তার বয়স ছিল ৩৫ বছর।

কোথায় গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ হয়?

কুশীনগর (উত্তরপ্রদেশ) ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে

গৌতম বুদ্ধের মূল উপদেশাবলী কি ছিল?

মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের মতে, এই পৃথিবীতে মানুষের দুঃখের সবচেয়ে বড় কারণ হল তাদের আসক্তি অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা এবং লোভ। যদি ইচ্ছাগুলোকে হত্যা করা হয়, তাহলে মানুষের কষ্টের কোনো কারণ থাকবে না।

গৌতম বুদ্ধ কোথায় প্রথম ধর্ম প্রচার করেন?

সারনাথে।

গৌতম বুদ্ধের অষ্টমার্গ কি?

বুদ্ধ আসক্তি থেকে মুক্তি লাভের জন্য ৮ টি আদর্শ নীতি পালনের কথা বলেছিলেন তা ‘অষ্টমার্গ’ বা ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ নামে পরিচিত।

গৌতম বুদ্ধের প্রথম গুরু কে ছিলেন?

মহাত্মা বুদ্ধের বিভিন্ন শিক্ষায় তাঁর বিভিন্ন গুরুর অবদান রয়েছে। আচার্য সবামিত্ত ছিলেন মহাত্মা বুদ্ধের শৈশব গুরু। গুরু বিশ্বামিত্র তাঁকে বেদ ও উপনিষদ শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু আলার কলামকে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ তিনি মহাত্মা বুদ্ধকে সন্ন্যাস গ্রহণের শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই আলার কলামকে মহাত্মা বুদ্ধের প্রধান শিক্ষক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

গৌতম বুদ্ধ কোথায় দেহত্যাগ করেন?

উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে

দ্বিতীয় বুদ্ধ কাকে বলা হয়?

পদ্মসম্ভবকে দ্বিতীয় বুদ্ধ বলা হয়।

আরও পড়ুন: মহাত্মা গান্ধীর জীবন কাহিনী


আশা করি গৌতম বুদ্ধের জীবনী বাংলা (Gautam Buddha Jiboni Bangla) প্রতিবেদনটি পড়ে আপনি গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন এবং একটু হলেও তা আপনার জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

Gautam Buddha Biography in Bengali লেখাটি অবশই বন্ধুদের সাথে Share করুন।

Leave a Comment