Bhuter Golpo মেস থেকে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য শ্মশানের পাশে বটগাছের নিচে আশ্রয় নিই। সেখানেই এক প্রেতের পাল্লায় পরি। শেষ পর্যন্ত কি হল জানার জন্য গল্পটি পড়ুন।
শ্মশানের ভূত Bhuter Golpo
প্রথম পর্ব
এক
পাঁচ বছর আগের ঘটনা। আমি তখন পড়াশোনার জন্য মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরের একটি মেসে থাকতাম। একদিন কলেজ থেকে ফিরে এসে বিশ্রাম নিচ্ছি এমনসময় ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মা ফোন করেছে।
ফোনটা ধরে বললাম, “হ্যাঁ মা,বলো।”
“তুই বাড়ি আসছিস কখন?” মা জিজ্ঞেস করল।
“কাল যাব মা। আমি এখন খুব ক্লান্ত। এইমাত্র কলেজ থেকে ফিরলাম।”
“কাল বাড়িতে পুজো মনে আছে তো, না সেটা ভুলে গেছিস।”
“পূজো তো কালকে। তবে আজকে কি করব?”
“পুজোর আগে অনেক কাজ থাকে। তোর বাবা একাই আর কতদিক সামলাবেন বল। তুই থাকলে ওনার ভালো লাগবে। তাছাড়া ঠাকুর মশাই এর কাল খুব তাড়া আছে। উনি বলে দিয়েছেন সকাল ৯ টার মধ্যে পুজো করে চলে যাবেন।”
এই ঠাকুরমশাই হলেন রতন চট্টোপাধ্যায়। এককালে তান্ত্রিক হওয়ার জন্য অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসার জীবনের আকর্ষণের কাছে হার মেনে বর্তমানে পূজো ও জ্যোতিষ বিদ্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
মা শেষে বলল, “আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। তুই আজকে আসবি।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। বললাম, “আচ্ছা আসছি।”
তখন বুঝতে পারিনি কোন ভয়াবহ বিপদ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সেটা জানা থাকলে কোন মতেই সেদিন বাড়ি যেতাম না
আরও পড়ুন:
দুই
এই অবেলায় কোন গাড়ি পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আকাশে মেঘ ঘন কালো হয়ে আসছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। তাই আর দেরি না করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মোটে ১৫ কিমি পথ। মাঝখানে গঙ্গা পার হতে হয় নৌকা করে। নৌকা থেকে নেমে খুব জোরে সাইকেল চালানো শুরু করলাম। মনে হচ্ছে যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হবে। গ্রামে ঢোকার রাস্তায় একটা শ্মশান পড়ে। এককালে এই শ্মশানের খুব বদনাম ছিল। জায়গাটা নাকি এক সময় ভূত প্রেতের আড্ডা ছিল। যত সব মিথ্যেবাদীর দল।
এই শ্মশানের কাছে আসতেই শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। তাড়াতাড়ি শ্মশানের পাশে একটা গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির সাথে সাথে অন্ধকার চারিদিকটা ঘিরে ফেলল।
একনাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছে। থামার কোনো নাম নেই। মাঝে মাঝে মনে হতো লাগলো মেঘ দেবতা বুঝি সংসারের সমস্ত ক্রোধ আমার উপর বর্ষণ করছেন। কিছুক্ষণ পর দেখি একটা লোক খালি গায়ে শ্মশানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বৃষ্টির জন্য ঠিক চিনতে পারলাম না। মনে হল লোকটা আর কেউ নয় আমাদের গ্রামের রামলাল পাগল।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
আমি তাকে গলা হাঁকিয়ে বললাম, “রামলাল বৃষ্টিতে ভিজছো কেন? এখানে এসে গাছের নিচে দাড়াও।” রামলাল কোন জবাব দিলো না। এক মনে সে কিছু খুঁজছে। শ্মশানের পোড়ানো চিতা গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একটা দেখা হয়ে গেলে আরেকটা, তারপর আবার আরেকটা, আবার, আবার।
Also Read:
গায়ের লোম ক্ষনে ক্ষনে খাড়া হয়ে যাচ্ছে। ঠিক বুঝতে পারলাম না এর জন্য কে দায়ী – ভয় না ঠান্ডা বাতাস। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এই বুঝি শ্মশানের মাটি ফেলে একটা কঙ্কালের হাত বেরিয়ে এসে আমার পা টেনে ধরবে। আশঙ্কা টা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এমন সময় পাশে কেউ থাকলে মনে একটু সাহস পাওয়া যেত।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
“রামলাল, ও রামলাল। ওখানে কি করছ? এখনে এসো।”
রামলাল আবার নিরুত্তর।
আমার মনে হলো পাগল রা বোধহয় কালা হয়। তা না হলে এত বড় ডাকার পরেও শুনতে পাবে না। আবার তাকে নিরীক্ষণ করা শুরু করলাম।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
এরপর রামলাল একটা সদ্য পোরানো চিতার পাশে দাঁড়িয়ে গেল। এখনো চিতা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সে আর নড়ল না। মনে হয় যা খুঁজছিল তা পেয়ে গেছে।
রামলাল একটা চিতার পাশে বসে আধপোড়া কাঠ গুলো হাত দিয়ে সরাতে লাগলো। সর্বনাশ। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। এই কান্ড অন্য কেউ দেখলে তাকে আস্ত রাখবে না। পাগল বলে তো সবাই তাকে ছেড়ে দেবে না।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
“রামলাল থামো, থামো বলছি।”
Also Read:
পাগল টা সত্যি কালা মনে হচ্ছে। ওকে থামাতে হবে। তা না হলে আজ একটা চরম কান্ড বাঁধিয়ে ছাড়বে। তার দিকে হেঁটে গিয়ে তাকে ঝাঁকানোর জন্য তার পিঠে হাত দিলাম। কিন্তু একি, তার শরীর একেবারে বরফের মত ঠান্ডা। তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিয়ে দু পা পিছিয়ে এলাম। পিঠে হাত দেওয়ার সাথে সাথে রামলাল থেমে গেল এবং মুখ দিয়ে একটা গোঁ গোঁ শব্দ করা শুরু করল।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
“এসব কি করছ? আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না।”
আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সে ধীরে ধীরে উঠে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এতো রামলাল নয়।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
আরও পড়ুন: শুভ অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৩ ছবি ও শুভেচ্ছা বার্তা
প্রথমে খেয়াল করনি। কিন্তু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আতকে উঠলাম। দেখলাম লোকটার চোখের জায়গায় দুটো কলো গর্ত এবং সেই গর্তের গভীরে জ্বলছে দুটো সাদা আলো।
আমি পিছু হটতে শুরু করলাম। লোকটাও আমার দিকে এগোতে শুরু করল। আমি গতি বাড়ালাম। সে ও বাড়াল। এরপর সোজা দৌড়ানো শুরু করলাম। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছি। বামে, ডানে বা পিছনে। কিন্তু কোনো এক অলৌকিক শক্তির সাহায্যে প্রতিবার সে আমার সামনে চলে আসছে।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
এতকিছু মধ্যেও একটা বিষয় বেশ আশ্চর্য ছিল। সে আমার পাশে পাশে দৌড়াচ্ছে, আবার কখনো সামনে বা পিছনে চলে আসছে। কিন্তু আমাকে স্পর্শ করতে পারছে না। কোন এক অজানা শক্তি তাকে বিরত করছিল আমাকে স্পর্শ করা থেকে।
এইভাবে কতক্ষন সে আমাকে তাড়া করেছিল তা ঠিক বলতে পারব না, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে শুনতে পায় রাস্তা থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, “সুরেশ, সুরেশ”। বৃষ্টির জন্য কোথাও আটকে গেছি কিনা দেখার জন্য হয়তো কেউ আমাকে খুঁজতে বেরিয়েছে।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
রাস্তায় দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি এবার ওনার দিকে দৌড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু দৌড়িয়ে পালাব কোথায়। মানুষ হলে তো তাকে ঝেড়ে ফেলব। কিন্তু সে তো অন্যকিছু। এবার সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক বিরাট কালো মূর্তি ধারণ করল। প্রায় কুড়ি ফুট লম্বা। মানুষ নয়, এক বিরাট আকারের প্রেত যার চোখে দুটো সাদা আগুনের শিখা জ্বলছে।
Bhuter Golpo Bhoter Golpo
এরপর আর আমার পক্ষে জ্ঞান ধরে রাখা সম্ভব ছিল না। আমি জ্ঞান হারালাম।
লেখক – অমিত মন্ডল (Amit Mandal)
ক্রমশ চলবে….
শ্মশানের ভূত গল্পের প্রথম পর্ব কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের গল্পটি পড়ার সুযোগ করে দিন।
Read Also:
Ato sunder Ekta golpo amader upohar dewar Jonno apnake asonkho dhonnobad.
Sir Ami apnar golpo ta Amader cartoon channel (on youtube) “Jibonto Putul” e cartoon er madhome tule dhorte chaichi. Jodi ai bisoye apnar anumati thakle khub upokrito hotham.
Sir apnar uttorer apekhai roilam Dhonnobad 🙏🏻.
Golpo ta khubi valo laglo
দারুন লাগছে।
স্বাগতম।
আমার লেখা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।