Janmashtami কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী হিন্দুধর্মের একটি প্রবিত্র উৎসব যা কৃষ্ণের ( বিষ্ণুর অষ্টম অবতার ) জন্মদিন হিসাবে পালন করা হয়। এই উৎসব বিভিন্ন নামে পরিচিত – জন্মাষ্টমী, গোকুলাষ্টামি, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী।
জন্মাষ্টমী Janmashtami
জন্মাষ্টমী কখন পালন করা হয়?
হিন্দু পঞ্জিকাঅনুসারে, প্রতিবছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী দিনে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়, যা ইংরেজি ক্যালেন্ডারে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কোন একদিন পরে।
বর্তমান বছর ২০১৯ সালে জন্মাষ্টমী পালন করা হবে ২৩ আগষ্ট, ২০১৯ তারিখ শুক্রবার।
তাৎপর্য
হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানা ভাবে উদযাপন করা হয়। যেমন – ভগবত পুরাণ অনুযায়ী নৃত্য, নাটক যাকে বলা হয় রাসলীলা বা কৃষ্ণ লীলা, মধ্যরাত্রি তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গীত গাওয়া, উপবাস, দহি হান্ডি প্রভৃতি।
রাসলীলা তে মূলত শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার বিভিন্ন ঘটনা দেখানো হয়।
অন্যদিকে দহি হান্ডি প্রথায় অনেক উঁচুতে মাখনের হাড়ি রাখা হয় এবং অনেক ছেলে মিলে মানুষের পিরামিড তৈরি করে সেই হাড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তামিলনাড়ুতে এ প্রথা উড়িয়াদি নামে পরিচিত।
শ্রীকৃষ্ণের সংক্ষিপ্ত জীবনী
শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকি ও বাসুদেব এর সন্তান এবং হিন্দু ধর্মাম্বলীরা তাঁর জন্মদিন জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় চারিদিকে অরাজকতা, নিপীরন, অত্যাচার চরম পর্যায়ে ছিল। সেই সময় মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। সর্বত্র ছিল অশুভ শক্তির বিস্তার।
শ্রীকৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন তাঁর জীবনের শত্রু। মথুরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সাথে সাথে সেই রাতে তাঁর বাবা বাসুদেব তাঁকে যমুনা নদী পার করে গোকুলে পালক মাতা পিতা যশোদা ও নন্দ র কাছে রেখে আসেন।
আরও পড়ুন:
জন্মাষ্টমীর (Janmashtami) দিন উপাসক মন্ডলী যা করেন
শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন একটি কিংবদন্তী দিন। এই দিন মানুষ কৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করার জন্য অভুক্ত থাকে, ধর্মীয় গান গায় এবং উপবাস পালন করে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে মধ্যরাতে তার ছোট ছোট মূর্তি কে স্নান করিয়ে কাপড় দিয়ে মোছা হয় এবং দোলনায় সাজানো হয়। তারপর উপাসক মন্ডলী নিজেদের মধ্যে খাদ্য ও মিষ্টান্ন বিনিময় করে উপবাস ভঙ্গ করে।
গৃহস্ত মহিলারা বাড়ির বিভিন্ন দরজার বাইরে, রান্নাঘরে শ্রী কৃষ্ণের পদচিহ্ন এঁকে দেন যা শ্রীকৃষ্ণের যাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভারতবর্ষের যেসব জায়গায় জন্মাষ্টমী পালন করা হয়
জন্মাষ্টমী মূলত পালন করা হয় মথুরা এবং বৃন্দাবনে। তাছাড়া মনিপুর, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে প্রচুর বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন সেখানে পালন করা হয়।
পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে জন্মাষ্টমী
পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে বৈষ্ণব মন্ডলী ব্যাপক এবং বিস্তৃতভাবে জন্মাষ্টমী পালন করে। এর পিছনের মূল কারণ হল পঞ্চদশ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে শংকরদেব এবং চৈতন্য মহাপ্রভুর দ্বারা কৃষ্ণ লীলার ব্যাপকহারে প্রচার। তারা বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত্ব দিয়েছিলেন এবং সাধারণ মানুষকে জন্মাষ্টমী পালনের নতুন নতুন কলা শিখিয়েছিলেন। যেমন – বোরগীত, অঙ্কীয়নাট, ক্ষত্রিয় এবং ভক্তিযোগ যা পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে খুব বিখ্যাত।
পরে পূর্ব ভারত এবং মণিপুরের মানুষজন তাদের নিজেদের নৃত্য কৌশল সৃষ্টি করে যা মনিপুরী নিত্য নামে পরিচিতি লাভ করে।
আরও পড়ুন:
মাতা পিতা তাদের সন্তান-সন্ততিকে এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও গোপীদের বেশে সজ্জিত করেন।
মঠ ও মন্দির গুলো নানা প্রকার ফুল দিয়ে সাজানো হয় এবং একসঙ্গে অনেক জন ভগবত পুরাণের দশম অধ্যায় ও শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠ ও শ্রবণ করেন।
শ্রী গোবিন্দ মন্দির ও ইসকন (ISKON) মন্দির গুলোতে খুব ঘটা করে জন্মষ্টমী উৎসব পালন করা হয়।
Also Read:
আসাম
আসামের সবাই নিজ গৃহে এবং গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে এই উৎসব পালন করে যাকে বলা হয় নামঘর (Namghars – Assamese: নামঘৰ)।
তাছাড়া বিভিন্ন মন্দিরে এ উৎসব পালন করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী উৎসবের শেষে সবাই নিজেদের মধ্যে মিষ্টি, অন্ন আদি বিতরণ করে।
উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ
পূর্ব ভারতের উড়িষ্যা বিশেষত পুরি ও নবদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চলে এবং পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী বা কৃষ্ণ জয়ন্তি নামে পরিচিত।
উপাসক মন্ডলী মধ্যরাত পর্যন্ত উপোস এবং পূজা, অর্চনা করেন।
ভারতবর্ষের বাইরে জন্মাষ্টমী
নেপাল
নেপালের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা ভজন, কীর্তন, উপবাস এর মাধ্যমে জন্মাষ্টমী উদযাপন করে। কৃষ্ণ মন্দির গুলো বিভিন্ন ফুল দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজানো হয়।
বাংলাদেশ
জন্মাষ্টমী বাংলাদেশের একটি জাতীয় উৎসব।
এই দিন উপাসক মন্ডলী ঢাকার ঢাকেশ্বরি মন্দির থেকে পুরনো ঢাকা পর্যন্ত শোভাযাত্রা করে।
এই শোভাযাত্রা ১৯০২ সাল থেকে শুরু হয়।
কিন্তু পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের আক্রমণের জন্য এই শোভাযাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরে ১৯৮৯ সাল থেকে তা আবার শুরু করা হয়।
পাকিস্তান
পাকিস্তানি হিন্দু ধর্মাম্বলীরা করাচিতে অবস্থিত শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরে ভজন, কীর্তন এবং নৈতিক বক্তৃতা দানের মাধ্যমে জন্মাষ্টমী পালন করে।
অন্যান্য দেশে
ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া অ্যারিজোনা, আমেরিকা, গুয়েনা, ত্রিনিদাদ, টোবাগো, জামাইকা প্রভৃতি দেশে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়।
Also Read: শ্রীমদ্ভগবদ গীতার সারাংশ